ঢাকা শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

বন্দরে অচলাবস্থা, জরুরি বৈঠকে বসছে মন্ত্রণালয়

ভারতের নিষেধাজ্ঞা
বন্দরে অচলাবস্থা, জরুরি বৈঠকে বসছে মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে পোশাক প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য প্লাস্টিকসহ প্রায় সাত ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারত। এ বিষয় করণীয় ঠিক করতে আজ মঙ্গলবার জরুরি সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশুকরণীয় নির্ধারণে বাণিজ্য সচিবের সভাপতিত্বে বিকাল ৪টায় আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

এছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

সিলেটের শেওলা স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা পণ্যগুলোর রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। গত রোববার সকাল থেকে ভারতের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা কোনো পণ্য রপ্তানি হয়নি এই বন্দর থেকে। এদিন পণ্যবাহী ১১টি ট্রাক বন্দরে আটকা পড়ে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। এতে করে ওই স্থলবন্দরে রপ্তানিতে এক প্রকার অচলাবস্থা বিরাজ করছে।

তবে রপ্তানি বন্ধ থাকার খবর ছড়িয়ে পড়ায় ব্যবসায়ীরা কোনো পণ্য বন্দরে পাঠাচ্ছেন না। ফলে রপ্তানিযোগ্য পণ্যবাহী কোনো গাড়ি গতকাল সোমবার বন্দরে আটকা নেই বলে জানিয়েছেন শেওলা স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মাহবুব হাসান।

এদিকে ভারতের অনুমতি থাকায় গতকাল সোমবার মেলামাইন পণ্যের একটি চালান রপ্তানির জন্য ভারতে প্রবেশ করেছে বলে জানা গেছে। শেওলা স্থলবন্দরের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, রোববার রপ্তানির জন্য আসা বেশ কিছু পণ্যবাহী ট্রাক বন্দরে আটকা পড়ে। শুধু কেমিক্যাল পণ্যবাহী একটি ট্রাক শেওলা বন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে। এরপর আজ আরও দুই ট্রাক পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এগুলো রপ্তানিতে ভারতের অনুমতি আছে বলে জানা গেছে।

ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড (ডিজিএফটি) গত শনিবার এক নির্দেশনায় জানায়, বাংলাদেশ থেকে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসহ কয়েকটি পণ্য ভারতের নির্দিষ্ট কিছু স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মিজোরাম এবং পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ি সীমান্ত দিয়ে এসব পণ্যের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে।

এতে করে বিপাকে পড়েছেন দেশের রপ্তানিকারকরা। অবশ্য ভারতের এই সিদ্ধান্তের কারণে ভারতের ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দু’দেশের পাল্টাপাল্টি সিদ্ধান্তের কারণে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে।

শেওলা স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, এই বন্দর দিয়ে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, তৈরি পোশাক, প্লাস্টিকসামগ্রী, ফার্নিচার, কোমল পানীয় ও ক্রোকারিজ পণ্য সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হতো। কিন্তু ভারতের নিষেধাজ্ঞার কারণে এসবের বেশিরভাগ পণ্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে। সূত্র জানায়, সম্প্রতি ভারত শেওলাসহ দেশের অন্যান্য স্থলবন্দর দিয়ে রেডিমেড গার্মেন্টস, ফল, ফলের স্বাদযুক্ত এবং কার্বনেটেড পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যদ্রব্য (বেকড পণ্য, স্ন্যাকস, চিপস এবং মিষ্টান্ন), তুলা এবং সুতির বর্জ্য, প্লাস্টিক এবং পিভিসি তৈরি পণ্য এবং কাঠের আসবাবপত্র আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। যার কারণে শেওলা বন্দর দিয়ে এসব পণ্য রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।

শেওলা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট শাহ আলম বলেন, ভারতের এই সিদ্ধান্তের কারণে বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কারণ এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থলবন্দর ব্যবহার করেই বেশিরভাগ পণ্য রপ্তানি করে। এভাবে রপ্তানি বন্ধ থাকলে তাদের উৎপাদন কমাতে হবে।

তিনি বলেন, ভারত স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে যেসব পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি সেগুলো খুবই কম পরিমাণে আমদানি করে। মূলত যেসব পণ্য বেশি আমদানি করে সেগুলোতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

তিনি আরও বলেন, রোববার রপ্তানি বন্ধ থাকায় পণ্যবাহী ১১টি ট্রাক বন্দরে আটকা পড়ে। তবে ভারতের ব্যবসায়ীরা কয়েক ট্রাক পণ্য আমদানির জন্য সেদেশের কাস্টমসের সঙ্গে যোগাযোগ করে আবেদন দিয়েছেন বলে জানা গেছে। কারণ অনেক পণ্যের চালানের মূল্য তারা টিটি করে দিয়েছেন। বিশেষ অনুমতি নিয়ে সেগুলো আমদানির চেষ্টা করছেন তারা।

শেওলা স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক মাহবুব হাসান বলেন, ভারত যে পণ্যগুলোতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সেগুলো রপ্তানি হচ্ছে না। বন্দরের অন্যান্য সব কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত